Directed By- Surender Reddy
Rating: 9/10
ছবিটি দেখার পর আমি প্রথমে একটা কথা বলতে চাই, ছবিটিকে কেউ দক্ষিণী ছবি হিসেবে দেখবেননা, ভারতীয় ছবি হিসেবে দেখুন। আমরা আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সংগ্রামীদের সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে আসছি, যা আমরা আমাদের পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। কিন্তু আমরা আসলে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ১০০% এর বড়জোর ৫০% জানি। বাকি ৫০% এখনো আমাদের কাছে অজানা, কারন তারা আমাদের পাঠ্যে নেই, অথবা ইতিহাসে যা চাপা পড়ে গেছে। তাদের একটি উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ” সারাগড়ি যুদ্ধ” । ঠিক তেমনি এক সংগ্রাম ছিল কুরনূলের যুদ্ধ ( https://en.m.wikipedia.org/wiki/Uyyalawada_Narasimha_Reddy ) , যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ” উয়াল্লাওয়াডা নরসিংহ রেড্ডি”, এবং এই ছবিটি তারই আত্মজীবনীর উপর কিছু সিনেমাটিক রুপ দিয়ে নির্মিত।
ছবিটি শুরু হয় ঝাঁসির রানি ” লক্ষ্মী বাই”-য়ের চরিত্রে ” অনুস্কা সেট্টি “কে দিয়ে। তিনি, ব্রিটিশ সৈন্যদের শক্তিকে ভয় পেয়ে পেছনে সরতে থাকা তার সেনার মনোবল বাড়ানোর জন্য তাদের সেই বীরের সম্পর্কে বলতে থাকেন যার দ্বারা তিনি অনুপ্রেরিত ও যিনিই সিপাহী বিদ্রোহের ১১ বছর আগে ১৮৪৬ সালের জুলাই মাসে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ স্বরূপ যুদ্ধ করেছিলেন এবং ১৮৪৭ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুদণ্ড হয়। তিনিই এই গল্পের মুখ্যচরিত্র ” উয়াল্লাওয়াডা নরসিংহ রেড্ডি”। এবার কিভাবে গল্পটি এগোবে এবং দর্শকদের মন জয় করবে, তার জানতে আপনাদের ছবিটি দেখতে হবে। গল্পের প্রথমার্ধের ৪০ মিনিট একটু শ্লো, অবশ্য তার কারন আছে। গল্প যেহেতু ঐতিহাসিক ও গল্পে প্রচুর চরিত্র আছে, তাই তাদের চরিত্রের ডেভেলপমেন্ট ও গল্পের মেরুদন্ড তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় দরকার, তাই প্রথমার্ধের প্রথম ভাগ এই কাজে ব্যবহৃত, যাতে দর্শক সেই চরিত্রদের সাথে ইমোশনালি সংযুক্ত হতে পারে। এইরকম ঘটনা আমরা আগে, ‘কেশরী’, ‘মনিকর্নীকা’ বা ‘বাহুবলী’-র মতো ছবিতে লক্ষ করেছি। ছবিতে ব্রিটিশদের এতটাই বাজে ভাবে দেখানো হয়েছে যে আপনাদের রক্ত গরম হতে বাধ্য, এবং যা ‘লগান’এর পর এই ছবিতে দেখলাম। এমনকি তারা যে আমাদের দেশে ” ডিভাইড এন্ড রুল” পদ্ধতিতে আমাদের দাস বানিয়ে ছিল তার খুবই ডিটেইলে দেখানো হয়েছে। এমনকি একটি দৃশ্যে বৃটিশরা বলেছে, ” ভারতীয়দের শক্তি তাদের বেদ, পূরাতন ও সংস্কৃতিতে আছে, এগুলিকে তাদের থেকে আলাদা করে দাও, ভারত এমনিতেই আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে”। যা বর্তমানেও আমরা হারে হারে টের পাচ্ছি, যে ভারতীয়রা কিভাবে নিজের সংস্কৃতিকে ভুলতে বসেছে। ছবিতে ব্রিটিশদের প্রবর্তিত “রায়তয়ারি” ব্যবস্থাকে খুবই সহজে ডিটেইলের সাথে দর্শকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে, কারন ছবির মূল ভিত্তি এই ব্যবস্থাই।
অভিনয়ে ছবিতে ভারতের প্রত্যেকটি বড় ইন্ডাস্ট্রির একজন তাঁবড় অভিনেতাকে নেওয়া হয়েছে। যেমন, তেলেগুর “চিরঞ্জীবি”, হিন্দির “অমিতাভ বচ্চন”, কান্নাডের “কিচ্চা সুদিপ”, তামিলের “বিজয় সেথুপতি”, মালায়লামের “নয়নতারা”, ভোজপুরির “রবি কিশান”, এছাড়াও রয়েছেন “তামান্না ভাটিয়া” ও “জগপতী বাবু”। কিন্তু যার কারণে এই ছবিটি স্পেশাল, তিনি হলেন “চিরঞ্জীবি” স্যার। তিনি ৬৪ বছর বয়সে যা খেলা দেখালেন তার জন্য তাকে সেলাম। বডি ডাবল থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজে যে স্টান্ট গুলো করেছেন তা এই বয়সে এত ফিটফুলি করা খুবই কষ্টকর, তার সাথে তার মারাত্মক অভিনয়, হয়ত এই জন্যই তাকে “মেগাস্টার চিরঞ্জীবি” বলা হয়। তার সঙ্গে বাকিরাও নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন, বিশেষত গুরুর চরিত্রে বচ্চন স্যার, মিয়া রেড্ডির চরিত্রে জগপতী বাবু ও লক্ষ্মী বাই এর চরিত্রে তামান্না ভাটিয়া।
সিনেমাটোগ্রাফি ও অ্যাকশন ছিল পয়সা উসুল। এবং তার সাথে প্রত্যেক দৃশ্যের BGM আপনার রক্ত গরম অথবা শরীরের লোম খাড়া করে দেবে। বিশেষত নরসিংহ মন্ত্র। টেকনিক্যাল দিক সত্যিই দারুন, পুরো ১০০/১০০।
এবং এই সিনেমার রাজনৈতিক মতাদর্শ ও সংলাপ আপনার ভেতর দেশভক্তি জাগাতে বাধ্য।তো এই ছিল “সাইরা নরসিংহ রেড্ডি” ছবিটি, আমি আপনাদের সকলকে বলবো এই ছবিটি স্বপরিবারে ও সকলের সাথে গিয়ে দেখে আসুন।